বিশ্বকাপ উন্মাদনার মাঝে সালমাদের জয়গান

ঠিক যেন ২১ বছর আগের প্রতিচ্ছবি। বার বার ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে সাফল্য পেয়েছিল বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দল। সেবার আকরাম, বুলবুলরা সেমিফাইনালে জিতে স্বপ্নের বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত করেন। রানার্সআপ নয় সেবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ফাইনালে কেনিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। যার পুরস্কার হিসেবে ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপে অভিষেক ঘটে বাংলাদেশের। ২১ বছর পর কুয়ালালামপুরে অনেকটা একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তবে এবার সাফল্য এসেছে নারী ক্রিকেটারদের হাত ধরে। কিছুদিন আগেও যাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হচ্ছিল সেই সালমা-রোমানা, ফারজানারা দেশকে এনে দিল বিরল এক সাফল্য। নারী ক্রিকেটে বিশ্বে পরাশক্তি দল ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবার এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। এই সাফল্য শুধু নারী নয় বাংলাদেশের ইতিহাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ট্রফি জয়।

ঢাকা ছাড়ার আগে সালমা দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন, লক্ষ্য আমাদের একটাই দেশকে বড় কিছু উপহার দেওয়া। কথা রেখেছেন অধিনায়ক। বাংলাদেশকে এশিয়া কাপ উপহার দিয়ে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করল তারা। গ্রুপ পর্বেও ভারতকে ৭ উইকেটে হারিয়েছিল। কিন্তু ফাইনালে জিতবে এই আশা অনেকেই করেননি। কারণ পাঁচবার ট্রফি জিতে এশিয়া কাপ নিজেদের করে রেখেছিল ভারতের মেয়েরা। সব ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে সালমারা বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছেন। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অন্য এক উচ্চতায়। শেষ ওভারে ৯ রান টি-২০ ক্রিকেটে মেয়েদের জন্য তোলাটা বেশ কষ্টকর। যেখানে সবার মাঝে দেশপ্রেম কাজ করছিল সেখানে কি কোনো বাধা আর মানে। দারুণ পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে দেশকে ভাসাল আনন্দসাগরে। বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনার মাঝে সবার মুখে এখন সালমাদের জয়গান। পুরুষ ক্রিকেটে অনেক অগ্রগতি হলেও দেশকে কখনো শিরোপার ট্রফি উপহার দিতে পারেনি। দুবার এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠলেও ঘরের মাঠে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় সাকিব, তামিম, মুশফিকদের। সেখানে কিনা দেশের বাইরে ট্রফি জিতল নারী ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সালমাদের নাম সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।

এশিয়া কাপ জিতেই গতকাল দেশে ফিরে চ্যাম্পিয়নরা। বিমানবন্দরে তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। সেখান থেকেই নারী ক্রিকেটাররা যোগ দেন সোনারগাঁও হোটেলে বিসিবি আয়োজিত ইফতার পার্টিতে। সেখানেই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান ঘোষণা দেন ২ কোটি টাকা বোনাসের। নারী ক্রিকেটাররা ট্রফি নিয়ে ফটো সেশনেও অংশ নেন। অধিনায়ক সালমা দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘এখানেই আমরা থেমে থাকতে চাই না। বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই। দেশকে আরও বড় ট্রফি উপহার দিতে চাই।’

  • ব্রেকিংবিডিনিউজ২৪ / ১২ জুন ২০১৮ / তানজিল আহমেদ